উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর নিউটনিয়ান বলবিদ্যা পদার্থবিজ্ঞান ১মপত্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই নিউটনিয়ান বলবিদ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই এইচএসসি পরিক্ষায় নিউটনিয়ান বলবিদ্যা থেকে সৃজনশীল, ও এমসিকিউ প্রশ্ন আসে। আজকের আর্টিকেলে নিউটনিয়ান বলবিদ্যা – এইচএসসি – পদার্থবিজ্ঞান ১মপত্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
নিউটনিয়ান বলবিদ্যা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন- বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ার সময় বন্দুকটি পিছনের দিকে সরে আসে কেন? কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গুলি ছোঁড়ার পর বন্দুকের পেছনের দিকে সরে আসতে দেখা যায়। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র থেকে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। গুলি ছোঁড়ার পূর্বে বন্দুক ও গুলি উভয়ের বেগ শূন্য থাকে কাজেই তখন তাদের ভরবেগের সমষ্টি শূন্য। গুলি ছোরার পর সামনের দিকে গুলির কিছু ভরবেগ উৎপন্ন হয়। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রানুযায়ী গুলি ছোঁড়ার আগের ভরবেগের সমষ্টি পরের ভরবেগের সমষ্টির সমান হতে হবে। সুতরাং গুলি ছোঁড়ার পরের ভরবেগের সমষ্টি সমান হতে হলে অর্থাৎ, শূন্য হতে হলে বন্দুকেরও গুলির সমান ও বিপরীতমুখী একটা ভরবেগের সৃষ্টি হতে হবে । ফলে বন্দুক পেছনের দিকে সরে আসে।
প্রশ্ন- জানালায় ঢিল ছুঁড়লে কাচ চৌচির হয়ে ফেটে যায় কেন?
উত্তর: জানালায় ঢিল ছুড়লে কাচ চৌচির হয়ে ফেটে যায় কারণ ঢিল ও জানালার মধ্যকার সংঘর্ষ বল জানালার কাচে ছড়িয়ে পরে। ঢিলটির বেগ কম তাই সংঘর্ষের সময়কাল বেশি বলে বল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার জন্য অধিক সময় পায়। এ কারণে উক্ত ঘটনা ঘটে।
প্রশ্ন-10N বল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: 10N = 1 kg × 10 ms -2 সুতরাং 10N বল বলতে বোঝায়, যে পরিমাণ বল 1 kg ভরের বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে এতে 10ms ত্বরণ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন- 6 × 10 N বল বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: 6 × 10^ N বল বলতে বুঝায়-
i. 1 kg ভরের কোনো বস্তুর 6 × 10 ms-2 ত্বরণ সৃষ্টিকারী বলের মান 6 x 105 NI
ii. 6 × 10 kg ভরের কোনো বস্তুর 1 ms মান 6 × 10° N ।
প্রশ্ন- গতির উপর বলের প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর: বল প্রয়োগ করে কোনো স্থিতিশীল বস্তুকে গতিশীল করা যায় বা গতিশীল কোনো বস্তুর গতির পরিবর্তন করা যায। কোনো বস্তুর গতির দিক বরাবর যদি বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে গতিশীল বস্তুর গতি আরো বৃদ্ধি পায় । আর বিপরীত দিক থেকে প্রয়োগকৃত বল বস্তুর গতি হ্রাস করে।
প্রশ্ন- একটি বস্তুর ত্বরণ শূন্য হলে বস্তুটি সাম্য অবস্থায় থাকবে- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, বস্তুর উপর প্রযুক্ত লব্ধি বল = বস্তুর ভর x ত্বরণ অর্থাৎ F = ma. এখন, বস্তুর ত্বরণ শূন্য হলে, প্রযুক্ত লব্ধি বল শূন্য হবে। আর কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত লব্ধি বল শূন্য হলে, বস্তুটি সাম্যাবস্থায় থাকবে। সুতরাং বলা যায়, একটি বস্তুর ত্বরণ শূন্য হলে বস্তুটি সাম্যাবস্থায় থাকবে।
প্রশ্ন- 50 N বল বলতে কী বুঝ?
উত্তর: 50 N বল বলতে বোঝায়—
i. যে বল 1 kg ভরের বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয়ে 50 ms-2 ত্বরণ সৃষ্টি করে ।
ii. যে বল 50 kg ভরের বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয়ে 1 ms ত্বরণ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন- একটি গড়ানো মার্বেলকে গড়ানোর গতির দিকে বল প্রয়োগ করলে কী ঘটবে?
উত্তর: বল প্রয়োগ করে কোনো স্থিতিশীল বস্তুকে গতিশীল করা যায় বা গতিশীল কোনো বস্তুর গতির পরিবর্তন করা যায়। একটি গড়ানো মার্বেলকে গড়ানোর গতির দিকে বল প্রয়োগ করলে মার্বেলের গতি আরও বৃদ্ধি পায় ।
প্রশ্ন- বল প্রয়োগ করলে সকল ক্ষেত্রে কাজ সম্পন্ন হয় না কেন?
উত্তর: কোনো বস্তুর ওপর F বল প্রয়োগের ফলে বলের দিকের সাথে ৪ কোণে s সরণ ঘটলে কৃতকাজ, W = Fscose F = 0 হওয়া সত্ত্বেও W = 0 হতে পারে যদি S = 0 অথবা cose = 0 অর্থাৎ 6 = 90° হয় । অর্থাৎ বল প্রয়োগ করা সত্ত্বেও বস্তুর যদি সরণ না ঘটে অথবা সরণ ঘটলেও যদি তা বলের লম্বদিকে ঘটে তবে কৃতকাজ শূন্য হয় । সুতরাং বল প্রয়োগ করলে সকল ক্ষেত্রে কাজ সম্পন্ন হয় না।
প্রশ্ন- ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া কীভাবে সম্পর্কিত ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। অর্থাৎ ক্রিয়া বল ও প্রতিক্রিয়া বলের মান সমান কিন্তু এদের দিক বিপরীতমুখী। যদি P ও Q দুটি বস্তুর মধ্যে P বস্তুটি Q বস্তুটির ওপর F, বল প্রয়োগ করে তখন Q বস্তুটিও P বস্তুর উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল F2 প্রয়োগ করবে। এখানে P বস্তু কর্তৃক Q বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে ক্রিয়া বল এবং Q বস্তু কর্তৃক P বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলকে প্রতিক্রিয়া বল বলে ।
প্রশ্ন- নিউটনের ৩য় সূত্রটি বিবৃত ও ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর: “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।” অর্থাৎ নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে ক্রিয়া বল ও প্রতিক্রিয়া বলের মান সমান কিন্তু এদের দিক বিপরীতমুখী F2 ← ® → F চিত্রে, P বস্তুটি Q বস্তুর উপর যখন F বল প্রয়োগ করে, তখন নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে Q বস্তুটিও P বস্তুর উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল F2 প্রয়োগ করবে। এখন P বস্তু কর্তৃক ( বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে ক্রিয়া বল এবং Q বস্তু কর্তৃক P বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে প্রতিক্রিয়া বল বলে । সুতরাং নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে, F2 = –F1 |
প্রশ্ন- হাঁটার সময় আমরা মাটির ভিতর ঢুকে যাই না কেন?
উত্তর: মাটির প্রতিক্রিয়া বলের কারণে আমরা হাঁটার সময় মাটির ভিতর ঢুকে যাই না। আমরা যখন মাটির উপর দিয়ে হাঁটি তখন পেছনের পা দ্বারা মাটির উপর পেছনের দিকে তির্যকভাবে একটা বল প্রয়োগ করি। এ বল হলো ক্রিয়া বল। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী এই বলের বিপরীতে একটি প্রতিক্রিয়া বল সৃষ্টি হয় । এই প্রতিক্রিয়া বলের কারণেই হাঁটার সময় আমরা মাটির ভিতর ঢুকে যাই না ।
প্রশ্ন- একট স্থির বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রী পিছনের দিকে ঝুঁকে যায় কেন?
উত্তর: বাস যখন স্থির অবস্থায় থাকে তখন যাত্রীও স্থির অবস্থায় থাকে। বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসের সাথে সাথে যাত্রীর শরীরের নিচের অংশ গতিপ্রাপ্ত হয় এবং সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু যাত্রীর উপরের অংশ স্থিতি জড়তার দরুন পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ।
প্রশ্ন- কম্বলকে ঝুলিয়ে রেখে বেত দ্বারা আঘাত করলে ধুলোবালি ঝরে পড়ে কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কম্বলকে ঝুলিয়ে বেত দ্বারা আঘাত করলে কম্বলটি সরে যায় কিন্তু ধুলোবালিগুলো ভর ক্ষুদ্র বলে জড়তার কারণে ঐ স্থানেই থেকে যায়। ফলে ধুলোবালিগুলো ঝড়ে পড়ে।
প্রশ্ন- স্পর্শ ও অস্পর্শ বলের মধ্যকার পার্থক্য লিখ।
উত্তর : যে বল সৃষ্টির জন্য দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের প্রয়োজন হয় তাকে স্পর্শ বল বলে । অপরদিকে দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তাকে অস্পর্শ বল বলে । সংজ্ঞানুসারে, অস্পর্শ বল দূর হতেই ক্রিয়া করতে পারে যেখানে স্পর্শবলসমূহ বস্তুর উপর ক্রিয়া করার জন্য সংস্পর্শের প্রয়োজন হয় ।
প্রশ্ন- প্রকৃতিতে বিদ্যমান মৌলিক বলসমূহের তীব্রতার তুলনা কর।
উত্তর: প্রকৃতিতে বিদ্যমান মৌলিক বলসমূহের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হলো মহাকর্ষ বল এবং সবচেয়ে সবল হলো সবল নিউক্লীয় বল। মহাকর্ষ বলের তীব্রতাকে 1 ধরলে অন্যান্য বলসমূহের আপেক্ষিক তীব্রতা নিচের ছকে দেয়া হলো— মহাকর্ষ বল দুর্বল নিউক্লীয় বল তড়িৎ চৌম্বক বল সবল নিউক্লীয় বল। তড়িৎ বলের ক্ষেত্রে কোন সংস্পর্শ ছাড়াই এই বল কাজ করে। যেহেতু তড়িৎ বলে কোন প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ নেই তাই একে অস্পর্শ বল বলে।
প্রশ্ন- প্রকৃতিতে বিদ্যমান মৌলিক বলসমূহের তীব্রতার তুলনা কর।
উত্তর: মহাকর্ষ < দুর্বল < তাড়িত < সবল এই অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে হবে।
প্রশ্ন- মহাকর্ষ বল একটি অস্পর্শ বল- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তাই হলো অস্পর্শ বল । আবার মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যকার আকর্ষণ বলই মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বলের ক্ষেত্রে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে কোনো সংস্পর্শ নেই তবুও এই বল কাজ করে। যেমন পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে 15 কোটি কিলোমিটার দূরত্ব থাকার পরও এদের মধ্যে মহাকর্ষ বল ক্রিয়াশীল। যেহেতু মহাকর্ষ বলেও দুটি বস্তুর কোন প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ নেই, অতএব মহাকর্ষ বল একটি অস্পর্শ বল ।
প্রশ্ন- মহাকর্ষ বল এবং তড়িৎ বলের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
উত্তর: মহাকর্ষ বল ও তড়িৎ বলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেয়া হলো :
মহাকর্ষ বল
(i) মহাকর্ষ বল মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তু মধ্যে ক্রিয়া করে যা আকর্ষণ ধর্মী
তড়িৎ বল
(i) তড়িৎ বল নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি আধানের মধ্যে ক্রিয়া করে যা আকর্ষণ বা বিকর্ষন বল হতে পারে।
(ii) তড়িৎ বল দুটি বস্তুর আধানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
(iii) তড়িৎ বল মাধ্যমের উপর নির্ভর করে ।
প্রশ্ন- সাম্য ও অসাম্য বল বলতে কী বোঝ— ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কোনো বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে যদি বলের লব্ধি শূন্য হয় অর্থাৎ বস্তুর কোনো ত্বরণ না হয়, তখন আমরা বলি বস্তুটি সাম্যাবস্থায় আছে। যে বলগুলো এই সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করে তদেরকে সাম্য বলে । অপরদিকে, কতগুলো বল একই বস্তুকণার উপর ক্রিয়া করে সাম্যাবস্থায় সৃষ্টি করতে না পারলে, বা বস্তুকণাতে ত্বরণ সৃষ্টি হলে ঐ বলগুলোকে অসাম্যবল বলে ।
প্রশ্ন- সাম্য ও অসাম্য বলের মধ্যে দুটি পার্থক্য লিখ।
উত্তর: সাম্য ও অসাম্য বলের মধ্যে দুটি পার্থক্য:
সাম্য বল
১. যে বলগুলো কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে সাম্যবস্থার সৃষ্টি করে তাকে সাম্য বল বলে ।
২. এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল বলগুলোর লব্ধি শূন্য ।
প্রশ্ন- সাম্য বলের দুটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর: অসাম্য বল যে বলগুলো কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে সাম্যবস্থার সৃষ্টি করে না তাকে অসাম্য বল বলে। এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল বলগুলোর লব্ধি শূন্য হয় না ।
কোনো বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে যদি বলের লব্ধি শূন্য হয় তাহলে বলগুলোকে সাম্য বল বলা হয়। সাম্য বলের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো:
i. সাম্য বলের ক্ষেত্রে বল গুলোর লব্ধি শূন্য হয় ।
ii. সাম্য বলের ক্ষেত্রে বস্তুর ত্বরণ থাকে না। এক্ষেত্রে ত্বরণের মান শূন্য হয় ।
প্রশ্ন- তড়িত্বলকে অস্পর্শ বল বলা হয় কেন?
উত্তর: দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তাই হলো অস্পর্শ বল। দুটি চার্জিত বস্তুর মধ্যবর্তী আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলই তড়িৎ
i. 1kg ভরের বস্তুর বেগ 500ms-1 বা
ii. 500kg ভরের বস্তুর বেগ 1ms
প্রশ্ন- ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হওয়া সত্ত্বেও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না কেন?
উত্তর: যখন দুটি সমান ও বিপরীতমুখী বল একই বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয়, অর্থাৎ প্রয়োগবিন্দু একই হয়, তখন সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে কিন্তু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল দুটি সব সময় দুটি আলাদা বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে, কখনই একই বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে না। তাই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরীতমুখী হলেও বল দুটি কখনও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
প্রশ্ন- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: একাধিক বস্তুর মধ্যে শুধু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো বল কাজ না করলে কোনো নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগের কোনো পরিবর্তন হয় না।
প্রশ্ন- ভর জড়তার পরিমাপক — ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভিন্ন ভরের দুটি বস্তু নিয়ে বস্তুদ্বয়কে স্থির অবস্থা থেকে গতিশীল করতে চাইলে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী ভারী বস্তুর ক্ষেত্রে বেশি প্রচেষ্টার দরকার হবে। একইভাবে বস্তুদ্বয় যদি গতিশীল থাকে তবে তাদেরকে থামানোর ক্ষেত্রে ভারী বস্তুর ক্ষেত্রে বেশি প্রচেষ্টা করতে হবে। এজন্যই বলা হয় ভর হল জড়তার পরিমাপক ।
প্রশ্ন- স্পর্শ বল কী ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যে বল সৃষ্টির জন্য দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের প্রয়োজন তাকে স্পর্শ বল বলে । যখন আমরা হাত দিয়ে কোনো বস্তুকে ঠেলি বা টানি তখন আমাদের হাত বস্তুর উপর একটি বল প্রয়োগ করে । টানা বল হচ্ছে স্পর্শ বল। কেননা হাত ও বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের ফলশ্রুতি হচ্ছে এ বল । স্পর্শ বলের উদাহরণ হলো- ঘর্ষণ বল, টান বল এবং সংঘর্ষের সময় সৃষ্ট বল ।
প্রশ্ন- স্থিতি জড়তা এবং গতি জড়তার মধ্যকার পার্থক্য — ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই স্থিতি জড়তা, আবার গতিশীল বস্তুর চিরকাল একই বেগে একই দিকে গতিশীল থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই গতি জড়তা। এক কথায় বস্তুর স্বীয় গতীয় অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাই জড়তা। বস্তুর স্থিরাবস্থা বলতে শূন্য বেগ বোঝায়। নির্দিষ্ট ভরের কোন বস্তু স্থির হোক বা গতিশীল হোক, নির্দিষ্ট দিক বরাবর তার বেগের নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিবর্তন ঘটাতে একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ স্থিতি জড়তা মূলত বিশেষ গতীয় জড়তা যেখানে বস্তুর পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে কোন বেগ থাকে না ।
প্রশ্ন- একটি মাইক্রোবাস ও একটি ট্রাকের মধ্যে কোনটির জড়তা বেশি এবং কেন?
উত্তর: একটি মাইক্রোবাস ও একটি ট্রাকের মধ্যে ট্রাকের জড়তা বেশি। কারণ প্রত্যেক জড় পদার্থই তার নিজের স্থির বা গতিশীল অবস্থা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করে এবং এটি বস্তুর ভরের সাথে পরিবর্তিত হয়। ভর বেশি হলে জড়তা বেশি হয়। যেহেতু একটি ট্রাকের ভর মাইক্রোবাসের চেয়ে বেশি সুতরাং ট্রাকের জড়তা বেশি হবে।
প্রশ্ন- দীর্ঘ লাফ প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীকে অনেক দূর থেকে লাফ দিতে হয় কেন?
উত্তর: দীর্ঘ লাফ প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীকে অনেক দূর থেকে লাফ দিতে হয়। কারণ, এর ফলে প্রতিযোগী কর্তৃক লব্ধ গতি জড়তার মান বেশি হয় এবং প্রতিযোগী অনেক দূর পর্যন্ত লাফ দিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন- চলন্ত বাস ব্রেক করলে যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন কেন?
উত্তর: বাস যখন চলন্ত অবস্থায় থাকে, তখন বাসের যাত্রীও বাসের সাথে একই গতিপ্রাপ্ত হয়। বাস হঠাৎ থেমে গেলে বাসের সাথে সাথে যাত্রীর শরীরের নিচের অংশ স্থির হয়। কিন্তু বাস যাত্রীর শরীরের উপরের অংশ গতি জড়তার জন্য সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
প্রশ্ন- নিউটনের গতির ১ম সূত্র থেকে কীভাবে জড়তার ধারণা পাওয়া যায়?
উত্তর: নিউটনের প্রথম সূত্র অনুসারে প্রত্যেক বস্তুই যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায় অর্থাৎ, বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দেখা যায়, বস্তুর এ স্থিতিশীল ও গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বল প্রয়োগ করতে হবে। পদার্থের নিজস্ব অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাই জড়তা।
প্রশ্ন- বায়ু ভর্তি একটি বেলুন ফুটা করে ছেড়ে দিলে তা সামনের দিকে উড়ে চলে কেন?
উত্তর: বায়ু ভর্তি একটি বেলুন ফুটা করে ছেড়ে দিলে তা ভরবেগের সংরক্ষরণ সূত্র মেনে চলে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। যখন বেলুন ফুটা করে দেয়া হয় তা থেকে যে বায়ু নির্গত হয় তার একটি ভরবেগ থাকে । তখন ভরবেগ সংরক্ষিত থাকার জন্য বেলুন বিপরীত দিকে গতিপ্রাপ্ত হয়। এ কারণে বেলুন ফুটা করে দিলে তা সামনের দিকে উড়ে চলে ।
প্রশ্ন- কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটতে কষ্টকর কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাস্তায় হাঁটার সময় রাস্তা ও পায়ের তলার মধ্যে যে ঘর্ষণ বল তৈরী হয় তার জন্য আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারি। কিন্তু কর্দমাক্ত রাস্তায় রাস্তা ও পায়ের তলার মধ্যকার ঘর্ষণ বল হ্রাস পায়। এর ফলে রাস্তায় আমরা পিছলে যাই । তাই কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটতে কষ্ট হয় ।
প্রশ্ন- ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সমান হওয়া সত্ত্বেও স্থির বস্তুতে কেন গতির সৃষ্টি হয় — ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরীতমুখী। এদের লব্ধি শূন্য হতো যদি এরা একই বস্তুর উপর ক্রিয়া করতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর ক্রিয়া করে, অর্থাৎ একটি বস্তুর উপর একটিমাত্র বল ক্রিয়া করে। এক্ষেত্রে ঐ বস্তুতে তৃতীয় কোনো বল প্রযুক্ত না হলে তাতে গতির পরিবর্তন তথা ত্বরণ সৃষ্টি হয়। ফলে স্থির বস্তুতে গতির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন- গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কোন ধরনের ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলার সময় আবর্ত ঘর্ষণ উৎপন্ন হয়। কেননা একটি বস্তু যখন অপর একটি তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে তখন গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ কাজ করে বা ক্রিয়া করে তাকে আবত ঘর্ষণ বলে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলার সময় গাড়ির চাকা রাস্তার তলের উপর দিয়ে পিছলিয়ে বা ঘষে চলার চেষ্টা করে না বরং গড়িয়ে গড়িয়ে চলে। এজন্যই গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলার সময় আবর্ত ঘর্ষণ উৎপন্ন হয় ।
প্রশ্ন- দেয়ালে পেরেক ঢুকালে আটকে থাকে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: দেয়ালে পেরেক ঢুকালে তা আটকে থাকে ঘর্ষণ বলের কারণে। যখন পেরেককে দেওয়ালের মধ্যে ঢুকানো হয় তখন এর বাইরের পৃষ্ঠ এবং দেয়ালের ভিতরের পৃষ্ঠের কণাগুলোর মধ্যে একটি ঘর্ষণ বলের উদ্ভব হয় । এই কারণে পেরেক দেয়ালে আটকে থাকে।
প্রশ্ন- প্যাচযুক্ত পানির কল যা ঘুরিয়ে খুলতে হয়, সাবানযুক্ত ভেজা হাতে তা খোলা কষ্টকর কেন?
উত্তর: সাবান এক ধরনের পিচ্ছিলকারী পদার্থ। তাই সাবানযুক্ত ভেজা হাতে প্যাচযুক্ত পানির কল খুলতে গেলে পানির কল ও হাতের মধ্যকার ঘর্ষণ বল অনেকাংশে কমে যায়। এ কারণে প্যাচযুক্ত পানির কল যা ঘুরিয়ে খুলতে হয়, সাবানযুক্ত ভেজা হাতে তা খোলা কষ্টকর।
প্রশ্ন- গাড়ির পার্টসে মবিল ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: ঘর্ষণ কমানোর জন্য গাড়ির পার্টসে মবিল ব্যবহার করা হয়। দুটি তলের মধ্যবর্তী স্থানে যখন মবিল ব্যবহার করা হয় তখন ঘর্ষণের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। গাড়ির গতিশীল পার্টসের মধ্যবর্তী স্থানে তাই মবিল ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন- ব্রেক প্রয়োগ করলে গাড়ির বেগ হ্রাস পায় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ব্রেক প্রয়োগে গাড়ীর গতিবেগের বিপরীতে বাধাদানকারী বলের সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ীর বেগ হ্রাস পায়। বাধাদানকারী এই বল গাড়ীর মন্দন ঘটায়। যেহেতু একক সময়ে নির্দিষ্ট দিকে বেগের হ্রাসের হারই মন্দন । তাই এই মন্দন, সৃষ্টিকারী বল গাড়ীর বেগের হ্রাস ঘটায়।
প্রশ্ন- সৈনিকগণ কীভাবে অনেক উঁচু থেকে প্যারাসুটের সাহায্যে মাটিতে নিরাপদে নেমে আসেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সৈনিকগণ যখন প্যারাসুটের সাহায্যে নিচে নামতে থাকে তখন তাদের ওজন খাড়া নিচের দিকে কাজ করে এবং প্যারাসুট ও বাতাসের মধ্যকার প্রবাহী ঘর্ষণ বল গতির বিপরীতে কাজ করে ফলে গতি কম হয় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। বাতাসের এই ঘর্ষণের কারণে সৈনিকগণ প্যারাসুটের সাহায্যে মাটিতে নিরাপদে নেমে আসতে পারে।
প্রশ্ন- ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণকে কাজে লাগিয়ে আমরা হাঁটাচলা করি, বাড়িঘর নির্মাণ করি, প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়ির দিক পরিবর্তন করি। কিন্তু ঘর্ষণের কারণে আবার শক্তির অপচয় হয়, যন্ত্রপাতির গতিশীল অংশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে; যন্ত্রপাতির দক্ষতা নষ্ট হয়। দৈনন্দিন কাজে ঘর্ষণকে যেমন পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না তেমনি অনেক ক্ষেত্রে ঘর্ষণ আমাদের উপকারে আসে । এজন্যই ঘর্ষণকে একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব বলা হয়।
আশাকরি নিউটনিয়ান বলবিদ্যা পদার্থবিজ্ঞান ১মপত্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে।