পদার্থের অবস্থা অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, কেমন আছো? আশা করি সকলেই ভালো আছো। আজকে তোমাদের পদার্থের অবস্থা অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে আলোচনা করবো। তো চলো শুরু করা যাক।

পদার্থের অবস্থা অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

এই অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১। গরম চায়ের কাপের উপর থেকে জলীয়বাষ্পের কণা বাআতাসে ছড়িয়ে পড়ে – বাষ্পীভবনের মাধ্যমে।

২। ভেজা কাপড় শুকানো, নদ – নদী ও পুকুর থেকে পানি বাস্প হওয়ার ঘটনা হলো – বাষ্পীভবন।

৩। কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বাষ্প হওয়ার প্রক্রিয়া হলো – উর্ধবপাতন।

৪। কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া হলো – ব্যাপন।

৫। সরু ছিদ্রপথে উচ্চ চাপের স্থান থেকে কোনো গ্যাসের নিম্ম চাপের স্থানের দিকে সজোরে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া হলো – নিঃসরণ।

৬। তাপ শক্তির শোষণ ও উতগিরণ এর ফলে পরিবর্তন ঘটে পদার্থের – অবস্থার।

৭। পদার্থের কণা সমূহ কিভাবে কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থায় গতিশীল থাকে তা জানা যায় – কণার গতিতত্ত্ব থেকে।

৮। কণাসমূহ পরস্পর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে এবং বাধাহীনভাবে চলাচল করে –  গ্যাসীয় অবস্থায়।

৯। জলীয় বাষ্প হলো পদার্থের – গ্যাসীয় অবস্থা।

১০। বায়বীয় পদার্থের তাপশক্তি নির্গমনের ফলে উৎপন্ন হয় – তরল পদার্থের।

১১। তরল পানিকে তাপ দিলে উৎপন্ন হয় – জলীয়বাষ্প।

১২। জলীয় বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তাপ শক্তি – নির্গত হয়।

১৩। আন্তঃআণবিক শক্তি খুবই কম এবং অণুসমূহের মধ্যাকার দূরুত্ব খুবই বেশি – জলীয় বষ্পের।

১৪। পদার্থের কণাগুলো চলাচল করে – তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায়।

১৫। পদার্থের কণাগুলো একই অবস্থায় কাঁপতে থাকে – কঠিন অবস্থায়।

১৬। পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই অপরিবর্তিত থাকে – কণার আকার।

১৭। কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে যদি সরাসরি গ্যাসীয় পদার্থে রূপান্তরিত হয় তবে এ প্রক্রিয়াকে  বলা হয় – উর্ধপাতন।

১৮। উর্ধপাতিত পদার্থের বাষ্পকে ঠান্ডা করলে পাওয়া যায় – কঠিন অবস্থা।

১৯। উর্ধপাতিত পদার্থের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত  হলো – তরল দশা।

Read More:  Guide to Saying "Enjoy Your Stay" in Unique Ways

২০। তাপ প্রয়োগে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সময় তাপমাত্রা বনাম সময় লেখচিত্র অংকন করা হয় যযা পরিচিত  – তাপীয় বক্ররেখা নামে।

২১। তাপীয় বক্ররেখা থেকে জানা যায় পদার্থের গলনাংক ও স্ফূটনাংক।

২২। গলনাংক ও স্ফূটনাংকে পৌঁছার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাপমাত্রা স্থির থাকে – সুপ্ত তাপের জন্য।

২৩। তাপীয় বক্ররেখায় কঠিন ও গ্যাস সহাবস্থান করে – উর্ধপাতিত পদার্থের ক্ষেত্রে।

২৪। ব্যাপন একটি – স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া।

২৫। কোনো পদার্থ যত হালকা তার ব্যাপন হার তত – বেশি।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ তাপমাত্রার পরিবর্তনে গ্যাসের আয়তনের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে – ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে গ্যাসের আয়তন বৃদ্ধি পায়। কারণ অধিক পরিমান শক্তি লাভ করায় গ্যাসীয় কণার ছুটাছুটি বেড়ে যাওয়ায় পরস্পর কিছুটা দূরে সরে যেতে থাকে। আবার তাপমাত্রা হ্রাস করলে আন্তঃআণবিক শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে  গ্যাসের আয়তন হ্রাস পায়।

প্রশ্নঃ বিভিন্ন অবস্থায় পদার্থের সংকোচনশীলতা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কঠিন, তরল ও বায়বীয় – এ তিন অবস্থায় পদার্থ অবস্থান করে। শক্তিশালী আকর্ষণ বলের কারণে কঠিন অবস্থায় অণুসমূহ দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। ফলে এ অবস্থায় পদার্থের সংকোচনশীলতা নেই বললেই চলে। চাপে তরল পদার্থ স্বল্প মাত্রায় সংকোচনশীল এবং বায়বীয় পদার্থ অধিক মাত্রায় সংকোচনশীল।

প্রশ্নঃ আন্তঃআণবিক শক্তি বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ যে শক্তির প্রভাবে পদার্থের অভ্যন্তরস্থ অনুসমূহে পরস্পরকে আকর্ষনের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে, তাকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলে। কঠিন পদার্থের কণাগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি। তরল পদার্থের কণাগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কঠিন পদার্থের চেয়ে কম। গ্যাসীয় পদার্থের কণাগুলো কঠিন ও তরলের চেয়ে অনেক বেশি। দূরে অবস্থান করে, তাই গ্যাসীয় পদার্থের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল খুবই কম।

প্রশ্নঃ কণার গতিতত্ত্ব বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং কণাগুলোর গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকেই কণার গতিতত্ত্ব বলা হয়। যখন কণাগুলোর ভেতরকার আকর্ষণ শক্তি বা আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি খুব বেশি থাকে তখন কণাগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। এই অবস্থা হচ্ছে কঠিন অবস্থা। কঠিন পদার্থকে তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি গ্রহণ করে কাঁপতে থাকে। যদি আরো বেশি তাপ দেওয়া হয় তাহলে কণাগুলো এত বেশি কাঁপতে থাকে যে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি কমে যায় এবং কিছুটা গতিশক্তি প্রাপ্ত হয়।

Read More:  কাজ শক্তি ও ক্ষমতা - এইচএসসি - পদার্থবিজ্ঞান ১মপত্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর

পদার্থের এই অবস্থাকে তরল অবস্থা বলা হয়। তরল অবথার পদার্থকে আরো বেশি তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি নিয়ে গতিশক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং একসময় গতিশক্তি এতো বেড়ে যায় যে কণাগুলো আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি থেকে প্রায় মুক্ত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় গ্যাসীয় অবস্থা। গ্যাসীয় অবস্থায় পৌঁছানোর পর যদি আরো তাপ  দেওয়া হয় তখন কণাগুলো আরো জোরে ছুটতে থাকবে অর্থাৎ গতিশক্তি আরো বেড়ে যাবে।

প্রশ্নঃ ব্যাপন বলতে কি বোঝায়?

ব্যাপন বলতে কি বোঝায়

উত্তরঃ কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। যেমনঃ একটি পাকা কাঁঠাল ঘরের একটি কক্ষে রেখে দিলে তার গন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটিই হলো ব্যাপন। কোনো পদার্থের ব্যাপন হার পদার্থের ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল।

প্রশ্নঃ ব্যাপনের দুটি ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ব্যাপনের দুটি ক্ষতিকর দিক হলোঃ

i) ব্যাপনের মাধ্যমে দুর্গন্ধ আশে পাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

ii) ব্যাপনের মাধ্যমে ক্ষতিকর গ্যাস, ধাতব কণা প্রভৃতি বায়ুমন্ডল ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশ্নঃ CO2 ও O2 এর মধ্যে কোনটি ব্যাপন দ্রুত ঘটে এবং কেনো?

উত্তরঃ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেনের মধ্যে অক্সিজেনের ব্যাপন দ্রুত ঘটে। ব্যাপন গ্যাসের ভর ও ঘনত্বের উপর  নির্ভরশীল। গ্যাসের ভর ও ঘনত্ব যত বেশি হবে ব্যাপন তত হ্রাস পাবে। সালফার ডাইঅক্সাইডের আণবিক ভর (৬৪) অপেক্ষা কার্বন ডাইঅক্সাইডের আণবিক ভর (৪৪) অপেক্ষা O2 এর আণবিক ভর কম। তাই সালফার ডাইঅক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ও O2 এর (৩২)  মধ্যে  O2  এর ব্যাপন হার বেশি।

প্রশ্নঃ NH3 এবং HCl এর মধ্যে কোনটির ব্যাপন হাআর বেশি এবং কেনো?

উত্তরঃ যে পদার্থের ঘনত্ব তথা আণবিক ভর যতো কম তার ব্যাপন হার ততো বেশি। কারণ  কম ঘনত্ববিশিষ্ট পদার্থের অণুসমূহ পরস্পর থেকে একটু দূরে অবস্থান করে। ফলে দ্রুত ব্যাপন ঘটে। NH3 এর আণবিক ভর (১৭) যা HCl এর আণবিক ভরের (৩৬.৫) চেয়ে কম। তাই NH3 এর ব্যাপন হার HCl অপেক্ষা বেশি।

Read More:  রাসায়নিক বন্ধন অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ তাপমাত্রা বাড়লে ব্যাপন হার বাড়ে কেনো?

উত্তরঃ তাপমাত্রা বাড়লে কোনো পদার্থের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলা হয়। আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কম হলে ব্যাপন দ্রুত হয় এবং ব্যাপন হার বেশি হয়। আবার ব্যাপন হচ্ছে অনুসমূহ তার আকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়া। তাপমাত্রা বাড়ালে পদার্থের অণুসমূহের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল ছিন্ন হয়। ফলে ব্যাপন হার বৃদ্ধি পায়। 

প্রশ্নঃ বিউটেনের নিঃসরণ হার প্রোপেনের তুলনায় কম হয় কেনো?

উত্তরঃ কোনো পদার্থের নিঃসরণের হার তার ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। বস্তুর ঘনত্ব ও ভর বেশি হলে নিঃসরণের হার কম হবে। প্রোপেন ও বিউটেনের মধ্যে প্রোপেন গ্যাসের ভর ও ঘনত্ব বিউটেন অপেক্ষা কম। তাই বিউটেনের নিঃসরণ হার প্রোপেনের তুলনায় কম হয়।

প্রশ্নঃ নিঃসরণ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ বাহ্যিক চাপের প্রভাবে সরু ছিদ্র পথে কোনো গ্যাসের সজোরে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। যেমন – উচ্চ চাপে রক্ষিত কোনো গ্যাস সিলিন্ডারে একটি সূক্ষ্ণ ছিদ্র করলে গ্যাস সজোরে বের হয়ে আসবে, এটি একটি নিঃসরণ প্রক্রিয়া।

প্রশ্নঃ মোম পোড়ালে কি ঘটে?

মোম পোড়ালে কি ঘটে

উত্তরঃ মোম হলো উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ। মোম বায়ুর অক্সিজেনে পোড়ালে তাপ এবং আলো পাওয়া যায়। মোম পোড়ালে প্রথমে মোমের গলন হয়, যা ভৌত পরিবর্তন এরপর মোমের দহন হয়, যা রাসায়নিক পরিবর্তন। মূলত আমরা জ্বলন্ত মোম থেকে তাপ ও আলোক শক্তি পেয়ে থাকি।

প্রশ্নঃ মোম জ্বালালে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় – ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মোমের প্রধান উপাদান হলো উচ্চতর হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ। মোম জ্বালালে মোমের কিছু অংশ শুধু ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে গলে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং ঠান্ডা হলে পুনরায় কঠিন অবস্থায় পরিণত হয়। একই সাথে মোমকে জ্বালালে হাইড্রোকার্বনের কার্বন ও হাইড্রোজেন বায়ুর অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয়বাষ্প উৎপন্ন করে। মোম জ্বালালে যেহেতু নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় তাই এই পরিবর্তন একটি রাসসায়নিক পরিবর্তন। রাসায়নিক পরিবর্তনে পদার্থের পরমাণুসমূহের মধ্যবর্তী বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন ঘটিত হয়।

আরো পড়ুনঃ পদার্থের গঠন অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

Leave a Comment