মাসি পিসি গল্পের প্রশ্নের উত্তর

উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর বাংলা প্রথম পত্রের গদ্যাংশের অন্তর্ভুক্ত একটি গল্পের নাম মাসি পিসি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই গল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই এইচএসসি পরিক্ষায় মাসি পিসি গল্প থেকে সৃজনশীল, ও এমসিকিউ প্রশ্ন আসে। আজকের আর্টিকেলে মাসি পিসি গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

Table of Contents

মাসি পিসি গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর

মাসি পিসি গল্পের প্রশ্নের উত্তর

তোমরা নাকি পণ করেছ মেয়া পাঠাবে না, তাতেই চটে আছে।

মাসি-পিসির মন নরম করার জন্য কৈলাশ জগুর প্রশংসা করে বলে যে, জগু আর আগের জগু নেই, সে এখন বউকে বাড়ি নিতে চায়। মাসি-পিসিকে সে আরও বলে যে, তারা মেয়ে শ্বশুরবাড়ি না পাঠানোর পণ করে আছে বলে জগু আরও রেগে আছে । এমনকি সে থানা-পুলিশ করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে।

বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো।

জামাই যেমনই হোক, সে আদর-যত্ন থেকে কখনো বঞ্চিত হয় না। জগু আহ্লাদির বর, সে তাকে লাথি-ঝাঁটা দিলেও তারা জামাইয়ের অনাদর করে না। জগু এলে মাসি-পিসি তাকে ছাগল বিক্রি করে ভালোমন্দ খাইয়েছে, আদর করেছে। আবার এলে আদরে রাখবে যতদিন থাকে । কৈলাশের কথার জবাবে মাসি বুঝিয়ে বলেছে— বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো ।

তবু আহ্লাদির ফ্যাকাশে মুখে তারই মুখের ছাপ রহমান দেখতে পায়।

বুড়ো রহমান চুপচাপ মাসি-পিসির সঙ্গে কৈলাশের কথাবার্তা শোনে। তার মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে মরেছে কয়েকদিন আগে। ছোট অবুঝ মেয়েটা কিছুতেই যেতে চায়নি । জোর করে তাকে পাঠানো হয়েছে। আহ্লাদির সঙ্গে তার চেহারার কোনো মিল নেই। তবু আহ্লাদির ফেকাসে মুখে তারই মুখের ছাপ দেখতে পায় রহমান। তাই ছলছল চোখে তাকায় আহ্লাদির দিকে ।

আহ্লাদি একটা শব্দ করে, অস্ফুট আর্তনাদের মতো।

আহ্লাদির স্বামী জগুর কথাটা কৈলাশ জানিয়ে দেয় মাসি- পিসিকে। তার বিয়ে করা বউকে বদ মতলবে আটকে রেখেছে । তাই সে মামলা করবে। আর মামলা করলে তারা বিপদে পড়বে। নিজেদের বিপদের কথা শুনে আহ্লাদি অস্ফুট আর্তনাদের মতো একটা শব্দ করে।

শাকপাতা খুদকুঁড়ো ভোজন, বছরে দুজোড়া থান পরন — খরচ তো এই।

মাসি আর পিসি ছাড়া আহ্লাদির আর কেউ নেই। বাবা-মা- ভাই মরেছে দুর্ভিক্ষের সময়। বিধবা দুজন বাপ বেঁচে থাকতেই এ সংসারে এসে ভর করেছে। ভরণ-পোষণের কিছুটা খরচ তারা নিজেরাই জোগাড় করত ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে, শাকপাতা ফলমূল ডাঁটা কুড়িয়ে। শাকপাতা খুদকুঁড়ো ভোজন, বছরে দুজোড়া থান পরনে— এর বেশি কিছু খরচ বিধবাদের জন্য লাগে না ।

Read More:  অপরিচিতা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর

গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে।

আহ্লাদির বাবা বিধবা মাসি-পিসির থাকার জায়গাটুকু দিলেও খাওয়াটা ছাঁটাই করে দিয়েছিল। বিধবা দুজনের অবস্থা তখন বাঁচে কি মরে। এর ওপর জগুর অত্যাচারে মরমর হয়ে আহ্লাদি এসে হাজির হয়। মাসি-পিসির সেবা-যত্নেই আহ্লাদি বেঁচে উঠেছিল। আহ্লাদির বাবা-মা সেটা স্বীকার করেছে, কিন্তু তার অন্নসংস্থানের ক্ষমতা তো নেই। এ অবস্থা প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে— ‘গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে?’

তাই মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা অবহেলার ভাব ছিল।

মাসি পিসি গল্পের প্রশ্নের উত্তর

সাধারণত বাপের বাড়ির কেউ হলে বাপের বাড়ির ওপর জোর খাটানোটাই রেওয়াজ। দুজনের বয়স এক, অবস্থা এক, একঘরে বাস, সুখ-দুঃখের কথা বলা সবই ঠিক ছিল।. কিন্তু কোন্দল বেধে গেলে পিসির অহংকার আরও বেড়ে যেত । পিসি এ বাড়ির মেয়ে, এটি তার বাপের বাড়ি। তাই মাসির ওপর পিসির একটা অবজ্ঞা অবহেলার ভাব ছিল, কারণ সে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।

সব বিরোধ সব পার্থক্য উড়ে গিয়ে দুজনের হয়ে গেল একমন, একপ্রাণ।

মাসি-পিসির মধ্যে বিরোধ-ঝগড়া হতো মাঝে মাঝে । শাকসবজি বিক্রি করে বাঁচার চেষ্টায় যখন কোমর বেঁধে নেমে পড়ল, তখন থেকে তাদের মধ্যকার সব বিরোধ সব পার্থক্য উড়ে গেল। দুজনের তখন একটাই ভাবনা- আহ্লাদিকে খাইয়ে পরিয়ে যত্নে রাখা। এই সূত্রে দুজনের * হয়ে গেল এক মন, এক প্রাণ।

তবু মুফতে যা পাওয়া যায় তাতেই জগুর প্রবল লোভ।

শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির ওপর জগুর প্রবল লোভ। আহ্লাদির বাবা-মা-ভাই কেউ বেঁচে নেই। কাজেই ঘরদোর, জমিজমা সবই তো আহ্লাদিই পাবে। এজন্যই জগু আহ্লাদিকে বাড়ি নিতে চায়। অবশ্য জমি সামান্যই। তবু মুফতে বা মাগনা যা পাওয়া যায় তা-ই লাভ বলে জগু মনে করে ।

নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে।

আহ্লাদি তার মাসি-পিসির কথায় শুয়ে-বসেই দিন কাটায় অথচ আড়ালে থেকেও সে বুঝতে পারে কীভাবে মানুষ তার দিকে তাকাচ্ছে, তরিতরকারির মতো তাকেও কেনা যায় কিনা যাচাই করছে। গাঁয়েরও কত জন কত রকম দর দিয়েছে মাসি-পিসির কাছে। কিন্তু মাসি-পিসির ধমকে চুপ হয়ে গেছে সবাই। আহ্লাদির মনে হয়, তার যেন সম্মান নেই, ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই, কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নেই। তাই নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে।

মাসি-পিসির মধ্যে ভয়ের লেশটুকু না দেখে সত্যিই তারা খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে।

কনস্টেবল, পেয়াদাসহ চৌকিদার এসে মাসি-পিসিকে দারোগাবাবুর কাছে কাছারিবাড়িতে যাওয়ার কথা বলে। এমনকি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার হুকুম আছে শোনানোর পরও মাসি-পিসির মধ্যে ভয়ের লেশমাত্র দেখা যায় না। বরং বড় বঁটি আর মস্ত কাটারি হাতে নিয়ে তাদেরকে ভয় দেখালে সত্যিই তারা খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায় ।

যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি।

মারাত্মক ভঙ্গিতে বঁটি আর কাটারি উঁচু করে মাসি-পিসি হাঁকডাক আরম্ভ করে। পাড়ার লোকজন ছুটে আসে। চৌকিদার পেয়াদা একফাঁকে পালিয়ে যায়। তবুও ভয় থেকেই যায় মাসি-পিসির। কারণ সেবার মেয়েটাকে কুটুমবাড়ি সরিয়ে দেওয়ায় সোনাদের ঘরে আগুন দিয়েছিল মাঝরাতে। তাই তারা কাঁথা-কম্বল চুবিয়ে রাখে জলে, হাঁড়ি-কলসি ভরে রাখে। যুদ্ধের আয়োজন করে মাসি- পিসি জেগে থাকে সারারাত।

Read More:  নিউটনিয়ান বলবিদ্যা - এইচএসসি - পদার্থবিজ্ঞান ১মপত্র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

পল্টু নরেশ এবং পরেশ উভয়েরই নয়নের মণিরূপে বাড়িয়া উঠিতে লাগল। নরেশ কিংবা পরেশ কেহই নিজের মতবাদ পল্টুর উপর ফলাইতে যাইতেন না। পল্টুর যখন যাহা অভিরুচি সে তাহাই করিত। নরেশের সঙ্গে আহার করিতে করিতে যখন তাহার মুরগি সম্বন্ধে মোহ কাটিয়া আসিত তখন সে পরেশের হবিষ্যান্নের দিকে কিছুদিন ঝুঁকিত। কয়েকদিন হবিষ্যান্ন ভোজনের পর আবার আমিষ-লোলুপতা জাগিলে নরেশের ভোজনশালায় ফিরিয়া যাইতেও তাহার বাধিত না ।

ক. মাসি-পিসি কিসের উপোস করেছিল?

খ. “তরিতরকারির মতো তাকেও কেনা যায় কিনা”– বুঝিয়ে লেখ ।

গ. উদ্দীপকের পল্টু, নরেশ ও পরেশের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রগুলোর মিল রয়েছে?

ঘ. “মাসি-পিসি’ গল্পে স্নেহ-মমতার যে রূপ ফুটে উঠেছে উদ্দীপকেও তা প্রকাশ পেয়েছে।”- মন্তব্যটি যাচাই কর।

ক. জ্ঞান

মাসি-পিসি শুক্লপক্ষের একাদশীর উপোস করেছিল।

খ. অনুধাবন

আহ্লাদি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার মাসি-পিসির কাছে চলে আসে। কিন্তু আসার পর থেকেই গ্রামের মানুষ তার দিকে কেমন যেন বাঁকা নজরে তাকায়। অনেকে আকারে-ইঙ্গিতে আহ্লাদিকে পাওয়ার কথা প্রকাশ করে। বাজারে তার মাসি-পিসি তরিতরকারি ও ফলমূল বিক্রি করে আর মানুষ সেগুলো কেনার ছলে তাদের সাথে আলাপ জমায় এবং ইঙ্গিত দেয়, কোনোভাবে আহ্লাদিকেও এভাবে কেনা যায় কিনা । এখানে নারীর প্রতি সমাজের এক শ্রেণির মানুষের হীন মানসিকতা প্রসঙ্গে লেখক একথা বলেছেন ।

গ. প্রয়োগ

সারকথা : উক্তিটিতে আহ্লাদির প্রতি গ্রামের লম্পট মানুষের লোলুপ দৃষ্টি প্রকাশিত হয়েছে।

উদ্দীপকের পল্টু, নরেশ ও পরেশের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি এবং আহ্লাদি চরিত্রের মিল রয়েছে ।

অনেক সময় বাবা-মা না থাকলে আত্মীয়স্বজনরা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। তারা বাবা-মায়ের মতো শিশুকে ভালোবাসার চেষ্টা করেন, আগলে রাখার চেষ্টা করেন। আর এমন ভালোবাসা খুব কম মানুষের ভাগ্যেই জোটে। তাই আত্মীয়স্বজনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত । • উদ্দীপকে নরেশ ও পরেশ পল্টুকে অত্যন্ত আদরের সাথে বড় করে তুলছিলেন। দুজনের কেউই পল্টুকে কোনো মত চাপিয়ে দিতেন না। পল্টুর যা মনে চাইত সে তাই করত। এমনকি পল্টুর যখন যেখানে খুশি সে তখন সেখানেই খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেলত। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদিকে তার মাসি ও পিসি অত্যন্ত যত্নে ও ভালোবাসায় আগলে রাখে। তার নিরাপত্তার স্বার্থে তারা যেখানেই যাক না কেন, আহ্লাদিকে সাথে নিয়ে যায়।

আহ্লাদিও রাতে ঘুমানোর সময় তার মাসি-পিসিকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পল্টু, নরেশ ও পরেশের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি, পিসি ও আহ্লাদির মিল রয়েছে। সারকথা : উদ্দীপকের নরেশ ও পরেশ পল্টুকে যেভাবে আগলে রেখেছেন তেমনি গল্পে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে আগলে রাখে ।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“মাসি-পিসি’ গল্পে স্নেহ-মমতার যে রূপ ফুটে উঠেছে উদ্দীপকেও তা প্রকাশ পেয়েছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ । স্নেহ-ভালোবাসা পৃথিবীতে অনেক দুর্লভ। পৃথিবীতে সব মানুষ স্নেহ-ভালোবাসা পায় না। কিন্তু পৃথিবী থেকে যদি স্নেহ- ভালোবাসা চলে যায়, তাহলে পৃথিবীতে আর কোনো মানুষই বেঁচে থাকবে না। সমাজ, পৃথিবী, সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি মোক্ষম হাতিয়ার।

উদ্দীপকে নরেশ ও পরেশ পল্টুকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখেন। তাকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করেন না, পল্টু নিজের মনের খেয়ালখুশিমতো চলে। তবুও নরেশ ও পরেশের স্নেহের ছায়া তার ওপর সর্বদা জাগ্রত। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদিকে মাসি-পিসি চোখের আড়াল করে না, তারা আহ্লাদিকে সবসময় স্নেহের বাঁধনে জড়িয়ে রাখে। আহ্লাদি সুবিধা-অসুবিধা সবকিছুর প্রতি তারা খেয়াল রাখে। এমনকি আহ্লাদিকে গোকুলের লোকজন তুলে নিতে এলে তারা জীবন বাজি রেখে আহ্লাদিকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করে। সারারাত জেগে আহ্লাদিকে তারা পাহারা দেয়।

Read More:  20 Professional Ways to Say “Have a Nice Evening”

উদ্দীপকে নরেশ ও পরেশের মধ্যে পল্টুর প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার যে দৃষ্টান্ত দেখা যায়, আলোচ্য গল্পে আহ্লাদির প্রতি মাসি-পিসির তেমনি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে । তাই বলা যায়, গল্পে মাসি-পিসির স্নেহের যে রূপ ফুটে উঠেছে উদ্দীপকের নরেশ ও পরেশের মাঝেও তা বিদ্যামান । সারকথা : উদ্দীপকে পল্টু, নরেশ ও পরেশ উভয়ের কাছ থেকে সমান স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসা পেয়েছে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিও মাসি-পিসির কাছ থেকে সন্তানের মতো স্নেহ-মায়া-মমতা পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পে সন্তানস্নেহের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

মাসি পিসি গল্পের প্রশ্নের উত্তর

দেশের সর্বত্র নারী নির্যাতনের ছড়াছড়ি থাকলেও গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা পুরুষতান্ত্রিক অত্যাচার থেকে মুক্ত রয়েছেন । স্বামীরা যখন-তখন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন না। ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে স্ত্রীকে বের করে দেওয়ার কোনো নজির নেই । স্ত্রীর মতে বা অমতে গারো পুরুষদের দ্বিতীয় বিয়ে করারও উদাহরণ নেই। ফলে নানা কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পিছিয়ে থাকলেও সে সমাজের নারীরা প্রগতির নানা ধাপে এগিয়ে রয়েছেন ।

ক. “বেলা আর নেই কৈলেশ”— কথাটি কে বলেছিল?

খ. মাসি-পিসি বঁটি আর কাটারি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে কেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিশেষ দিকটির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্য কর ।

ঘ. “উদ্দীপকে গারো নারীদের জীবন আর ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির জীবন একই সুতোয় বাঁধা।”- মন্তব্যটি বিচার কর।

খ. অনুধাবন

কানাই চৌকিদার, গোকুল আর তাদের দলবলকে বাড়ি থেকে তাড়াতে মাসি-পিসি বঁটি আর কাটারি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। গোকুলের হুকুমে কানাই চৌকিদার মাসি-পিসিকে কাছারিবাড়িতে নিতে আসে। মাসি-পিসি বুঝতে পারে যে, তারা কাছারিবাড়িতে গেলেই ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আহ্লাদিকে ধরে নিয়ে যাবে। তাদের এই বাসনাকে মাসি-পিসি সফল হতে না দেওয়ার পরিকল্পনা করে । আর এ কারণে গোকুলের লোকদের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা বঁটি আর কাটারি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে ।

গ. প্রয়োগ

সারকথা : গোকুলদের লালসার হাত থেকে আহ্লাদিকে বাঁচাতেই তারা বঁটি এবং কাটারি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে । উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পে উল্লিখিত নারী নির্যাতনের বিষয়টির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

পৃথিবীর অনেক সমাজে এখনও নারীকে মানুষ বলে ভাবা হয় না। শারীরিক-মানসিক নানাভাবে অত্যাচারিত হয় নারীরা। এই অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা কখনো কখনো হয় খুব ভয়াবহ ।

‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদির স্বামী জগু আহ্লাদিকে মানুষ বলেই মনে করত না। নানাভাবে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করত। উদ্দীপকে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের গারো নারীদের কখনো স্বামী বা স্বামীর পরিবারের কারও দ্বারা অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হতে হয় না। এ কারণে এ সমাজের নারীরা প্রগতির নানা ধাপে এগিয়ে রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকে গারো নারীদের নির্যাতিত না হওয়ার বিষয়টি ‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদির নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকে গারো নারীদের জীবন আর ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির জীবন একই সুতোয় বাঁধা।”- মন্তব্যটি সত্য নয় ।

নারী নির্যাতন বর্তমান সমাজে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় নারীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয় না। অন্যদিকে কারণে অকারণে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার।

‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদি তার স্বামীর দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়। স্বামীর আচরণ অত্যন্ত পাশবিক হওয়ার কারণে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে তার স্বামীর বাড়িতে যেতে দেয় না। অপরদিকে উদ্দীপকের গারো পরিবারে ও সমাজে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে । স্বামীরা কখনো তাদের নির্যাতন করে না। পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাদের প্রতি মর্যাদাশীল ।

স্বামীর কাছে আহ্লাদির কোনো মূল্য নেই, মর্যাদা নেই। কিন্তু উদ্দীপকের গারো নারীরা স্বামীর কাছ থেকে মূল্য ও মর্যাদা দুটোই পায় । তাই বলা যায়, ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি ও উদ্দীপকের নারীদের জীবন একই সুতোয় বাঁধা নয়। সারকথা : স্বামীর কাছে গারো নারীদের মূল্য ও মর্যাদা দুটোই আছে। তবে আহ্লাদির কোনোটিই নেই। এ কারণে আহ্লাদি এবং গারো নারীদের জীবন এক সুতোয় বাঁধা নয়।

আরো পড়ুনঃ রেইনকোট গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর

Leave a Comment